ছবিসূত্র: উইকি, নালান্দা ইউনিভারসিটির আংশিক মানচিত্র
আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি? আপনি না জানলেও গুগোলিং করে পেয়ে যাবেন ইটালীর বোলোংগা অথবা প্যারিস ইউনিভারসিটি। কিন্তু বাস্তবতা হল এদুটো বিশ্ববিদ্যালয় হল ১১শ শতকের। এর প্রায় ১৬ শত বছর পূর্বে এই ভারতীয় উপমহাদেশে (বর্তমানে পাকিস্থানের পান্জাবে) টাক্সিলা নামে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। সরাসরি এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে অনেকে আপত্তি তুললেও কখনই পৃথিবীর প্রথম উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করেনি।

টাক্সিলাকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি না দিলেও নালান্দাকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে সবাই স্বীকার করে। রাজা অশোকা খ্রীষ্টপূর্ব ২৭৩-২৩৩ তে এর স্থাপনা শুরু করলেও মূলত ৬ শতকে এর পূর্ণ বিকাশ ঘটে (গুপ্ত শাষনামলে) এবং পূর্ণ উচ্চ শিক্ষকেন্দ্র হিসাবে চালু হয় এবং তা চলে ১১৯৭ সাল পর্যন্ত। এর অবস্থান বর্তমান ভারতের বিহারে।

আজও নালান্দাকে পৃথিবীর সবচাইতে পুরাতন পুর্ণাঙ্গ উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে গণ্য করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল সমৃদ্ধশালী পাঠাগার যাকে ট্রুথ অব মাউনটেইন বলা হত। এতে লক্ষ লক্ষ বই ও গবেষনা পত্র ছিল। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বিল্ডিং এই পাঠাগার বিস্তৃত ছিল যার প্রত্যেকটার উচ্চতা নয় তলার সমান ছিল। তিনটি পাঠাগারের নাম ছিল সী অব জুয়েলস, ওশান অব জুয়েলস এবং ডিলাইটার অব জুয়েলস। এই তিন জুয়েল কে একসঙ্গে বলা হত ট্রুথ অব মাউনটেইন।

এই উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্রে মেডিসিন, ফিলোসপি, সায়েন্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করা হত।

১১৯৩ সালে তথাকথিত ইসলামের মুখোশ পরা টার্কিশ বখতিয়ার খিলজি নালান্দা আক্রমন করে এবং প্রায় সমস্ত শিক্ষক ছাত্রকে হত্যা করে, সব পাঠাগারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় যা পুড়তে কয়েকমাস সময় লাগে। এরই সাথে শেষ হয় এই উপমহাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী জ্ঞানভান্ডার।

আমাদের দেশে এখনও অনেক বুদ্ধিজীবি, কবি, সাহিত্যিক আছেন যারা প্রকৃত ইতিহাস আড়াল করে বখতিয়ার খিলজিকে তাদের বাপের আসনে বসিয়েছে (উদাহরণ হিসাবে আল মাহমুদের বখতিয়ারের ঘোড়াগুলো'র কথা বলা যেতে পারে যেখানে তিনি বখতিয়ারকে দেখিয়েছে মুসলিমের ত্রাণকর্তা হিসাবে)। ১৯৭১ এ পাক আর্মি আর এদেশের রাজাকাররা মিলে যেমন আমাদের সব শিক্ষক, ডাক্তার আর বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করেছে তার সূচনাটা করেছে এই উপামহাদেশে এই হারে হারামজাদা বখতিয়ার খিলজি।

নালান্দার স্মৃতি ধরে রাখতে উইয়র্ক টাইমস, জাপান, চীন আর ইন্ডিয়া মিলে এই নালান্দা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি নামে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে যাচ্ছে।

0 মন্তব্য: