ফর্মালিন (-CHO-)n হল ফর্মালডিহাইডের (CH2O) পলিমার। ফর্মালডিহাইড দেখতে সাদা পাউডারের মত। পানিতে সহজেই দ্রবনীয়। শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ফর্মালিনের জলীয় দ্রবনকে ফর্মালিন হিসাবে ধরা হয়। ফর্মালিন সাধারনত টেক্সটাইল, প্লাষ্টক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। আমাদর মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে (বাংলাদেশ, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া ইত্যাদী) ফর্মালিনের মূল ব্যবহারের পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে বর্তমানে অনৈতিকভাবে ব্যভার করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফর্মালিন অতিবিপদজনক ক্যাটাগরীতে। ফর্মালিনের বোতলে উপরের ছবিটা ব্যবহার করা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ র্ফমালিন ত্বকের এলার্জি, নিউমোনিয়া, এ্যাজমা (সাধারনত দীর্ঘদিনের সংস্পর্শে), গলা ব্যথা, ফুসসুসের সংকোচন, নাক ও শ্বাসনালীর পীড়াসহ চোখের ইরিটেশন করতে পারে (ফর্মালিনের বাষ্প)। অত্যাধিক মাত্রায় গ্রহণের ফলে শরীরের অভ্যন্তরীন মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াসহ ডায়রিয়া, রক্ত বমি, কোলন ক্যানসার (পাইলস- কৃতজ্ঞতা মাটিবাবা ওরফে সত্যের সেনানী), মূত্রে রক্তও দেখা দিতে পারে।
বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষের জন্য ফর্মালিনের লিথাল ডোজ হল ৩০ মিলিলিটার। বাতাসে ২ পিপিএমের নিচের মাত্রাকে গ্রহণযোগ্য হিসাবে ধরা যায়।


কিভাবে বুঝবেন খাদ্যে ফর্মালিন দেওয়া?


মাছঃ ফর্মালিন দেওয়া মাছ ও মাছের আষঁটে শক্ত, মাছের কান উল্টালে ভিতরে লাল দেখা যায় (আমার গ্রামে খালসা বা কানটা বলে মনে হয়), মাছ মাছ গন্ধ থাকে না বললেই চলে এবং সর্বপরি সাধারনত খুব কম মাছি ফর্মালিন দেওয়া মাছে বসে( এইখানে উল্লেখ্য যে, সবকিছুই খাচ খেয়ে চলে, দীর্ঘদিন মাছ বাজারের মাছি ফর্মালিনে কিছুটা অভ্যস্থ হলে ফর্মালিন দেওয়া মাছ বাড়িতে আনলে সহজে মাছি ঐ মাছে বসবে না)। ফর্মালিন দেওয়া শুটকি মাছে রান্না করার পরেও শক্তভাবটা যায় না।

ফলঃ ফর্মালিন দেওয়া ফল শনাক্ত করা বেশ কষ্টসাধ্য। কারন অনেক ফলেই ফেরোমন থাকে।


কিভাবে মাছ থেকে ফর্মালিনের দূর করবেন ?


১। পরীক্ষায় দেখা গেছে পানিতে প্রায় ১ ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফর্মালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ কমে যায়।
২। লবনাক্ত পানিতে ফর্মালিন দেওয়া মাছ ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ফর্মালিনের মাত্রা কমে যায়।
৩। প্রথমে চাল ধোয়া পানিতে ও পরে সাধারন পানিতে ফর্মালিন যুক্ত মাছ ধুলে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ফর্মালিন দূর হয়।
৪। সবচাইতে ভাল পদ্ধতি হল ভিনেগার ও পানির মিশ্রনে (পানিতে ১০ % আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট মাছ ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ফর্মালিনই দূর হয়।
এছাড়া ফর্মালিন শনাক্তকরণের রাসায়নিক দ্রব্যও বাজারে আজকাল পাওয়া যায় সুলভ  মুল্যে ।

মূলপোষ্ট ও প্রথম প্রকাশ

বর্তমানে লন্ডনে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেনু কাদঁতে কাদঁতে বললেন এক বুড়িমার কথা। ভারতে সীমান্ত এলাকায় যখন তিনি ক্যাম্পে ক্যাম্পে শরনার্থী আর মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ধরে রাখতে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের গান করতেন তখন সন্ধান পান এই বুড়িমার। ঐ ক্যাম্পের সবাই জানে বুড়িমা কখনও কারও সাথে কোন কথা বলে না। একদিন মাহমুদুর রহমান গান করে ফিরে আসার সময় বুড়িমা তাকে হাত ধরে বলল বাবা তুই আমার গলাটা টিপে দিয়ে যা। বুড়িমার সামনে পাক বাহিনী তার চার ছেলে, ছেলের বউ ও তাদের ছেলে মেয়ে সবাইকে হত্যা করার পরে বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন এই বুড়িমা।
এ কথাগুলৈ বলছিলেন আর আঝরে কাঁদছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেনু। তিনিও আরও জানালেন সকাল ৬টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত কিভাবে একটা মিনিবাসে করে ঘুরে ঘুরে সারাক্ষন গান করতেন। এতো গেল শুধু মাহমুদুর রহমানের কথা।
এর আগে ফাহমিদা খাতুন বললেন কিভাবে পাক আর্মির সামনে পাকিস্থানের স্বাধীনতা দিবসে তাদের পতাকা না উড়িয়ে আর জাতীয় সংগীত না বাজিয়ে "আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে....." গানটি বার বার প্রচার করা হচ্ছিল।
সালেহ আহমেদ জানালেন
কিভাবে খালি গায়ে একটা বন্ধ একটা ঘরে
মুক্তিযুদ্ধের গান রেকর্ড করতেন আর চট্টগ্রাম খালুরঘাট থেকে রেডিওর ট্রান্সমিটার চুরি করে নিয়ে গেলেন।

কিভাবে ও কি পটভূমিতে তৈরি হল রণাঙ্গনের সেইসব রক্ত গরম করা গান। যেমন:-
"পাকপশুদের মারতে হবে চলরে নাও বাইয়া
নৌকা মোদের চলে এবার যুদ্ধের সামান লইয়া"
কিভাবে পশ্চিম বাংলার সুরকারও গীতিকারেরা যুক্ত হলেন এই মুক্তিযুদ্ধের গানে।

এইসবই হয়ছে বিবিসি বাংলা বিভাগের আয়োজনে। চমৎকার একটা অনুষ্ঠান, সংগ্রহে রাখার মত কিছু জানা-অজানা কথা।
এরকম আরও একটা অনুষ্ঠান করছিল বিবিসি বাংলা বিভাগ ১৯৯৬ সালে। অনেক খুঁজেও পেলাম না সেই অনুষ্ঠানের বিস্তারিত তাই এবার নিজেই রেকর্ড করলাম আর আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।


কথা দিচ্ছি সময়ের অপচয় হবে না কারও।
এখনও পুরো অনুষ্ঠানই শুনতে পারবেন বিবিসি বাংলা বিভাগ থেকে সরাসরি।
আর পুরো অনুষ্ঠানটা ডাউনলোড করতে পারবেন এইখান থেকে মিডিয়া ফায়ারের লিংক।



ছবিসূত্র: উইকি, নালান্দা ইউনিভারসিটির আংশিক মানচিত্র
আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি? আপনি না জানলেও গুগোলিং করে পেয়ে যাবেন ইটালীর বোলোংগা অথবা প্যারিস ইউনিভারসিটি। কিন্তু বাস্তবতা হল এদুটো বিশ্ববিদ্যালয় হল ১১শ শতকের। এর প্রায় ১৬ শত বছর পূর্বে এই ভারতীয় উপমহাদেশে (বর্তমানে পাকিস্থানের পান্জাবে) টাক্সিলা নামে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। সরাসরি এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে অনেকে আপত্তি তুললেও কখনই পৃথিবীর প্রথম উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করেনি।

টাক্সিলাকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি না দিলেও নালান্দাকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে সবাই স্বীকার করে। রাজা অশোকা খ্রীষ্টপূর্ব ২৭৩-২৩৩ তে এর স্থাপনা শুরু করলেও মূলত ৬ শতকে এর পূর্ণ বিকাশ ঘটে (গুপ্ত শাষনামলে) এবং পূর্ণ উচ্চ শিক্ষকেন্দ্র হিসাবে চালু হয় এবং তা চলে ১১৯৭ সাল পর্যন্ত। এর অবস্থান বর্তমান ভারতের বিহারে।

আজও নালান্দাকে পৃথিবীর সবচাইতে পুরাতন পুর্ণাঙ্গ উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে গণ্য করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল সমৃদ্ধশালী পাঠাগার যাকে ট্রুথ অব মাউনটেইন বলা হত। এতে লক্ষ লক্ষ বই ও গবেষনা পত্র ছিল। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বিল্ডিং এই পাঠাগার বিস্তৃত ছিল যার প্রত্যেকটার উচ্চতা নয় তলার সমান ছিল। তিনটি পাঠাগারের নাম ছিল সী অব জুয়েলস, ওশান অব জুয়েলস এবং ডিলাইটার অব জুয়েলস। এই তিন জুয়েল কে একসঙ্গে বলা হত ট্রুথ অব মাউনটেইন।

এই উচ্চ শিক্ষাকেন্দ্রে মেডিসিন, ফিলোসপি, সায়েন্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করা হত।

১১৯৩ সালে তথাকথিত ইসলামের মুখোশ পরা টার্কিশ বখতিয়ার খিলজি নালান্দা আক্রমন করে এবং প্রায় সমস্ত শিক্ষক ছাত্রকে হত্যা করে, সব পাঠাগারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় যা পুড়তে কয়েকমাস সময় লাগে। এরই সাথে শেষ হয় এই উপমহাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী জ্ঞানভান্ডার।

আমাদের দেশে এখনও অনেক বুদ্ধিজীবি, কবি, সাহিত্যিক আছেন যারা প্রকৃত ইতিহাস আড়াল করে বখতিয়ার খিলজিকে তাদের বাপের আসনে বসিয়েছে (উদাহরণ হিসাবে আল মাহমুদের বখতিয়ারের ঘোড়াগুলো'র কথা বলা যেতে পারে যেখানে তিনি বখতিয়ারকে দেখিয়েছে মুসলিমের ত্রাণকর্তা হিসাবে)। ১৯৭১ এ পাক আর্মি আর এদেশের রাজাকাররা মিলে যেমন আমাদের সব শিক্ষক, ডাক্তার আর বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করেছে তার সূচনাটা করেছে এই উপামহাদেশে এই হারে হারামজাদা বখতিয়ার খিলজি।

নালান্দার স্মৃতি ধরে রাখতে উইয়র্ক টাইমস, জাপান, চীন আর ইন্ডিয়া মিলে এই নালান্দা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি নামে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে যাচ্ছে।

অভাব অনটনের সংসারে রেনু (ডিভোর্সী; কেন ও কিভাবে এইকথা জানা যায় না সিনেমা দেখে) একমাত্র উপার্জনকারী। মায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন মধ্যবয়স্কার মতই। রেনুর বড় ভাই অন্ধ, ছোট ভাই ঢাবির ছাত্র ও নেশাখোর। রেনু কাজ করে একটা এনজিওতে। তার কাজ মাদকসেবীদের সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করে। এমনই এক মাদকসেবী ইমারনের সাথে সম্পর্ক হয়ে যায় রেনুর। এই সম্পর্কের কথা জেনে বিচলিত হয়ে পরে রেনুর মা, তার সংসারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এক পর্যায়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় রেনু। এরপরে পাবলিক পিটুনীতে মারা যায় ইমরান। কাহিনীতে আর তেমন কিছু বলার নাই।

এই সিনেমার কাহিনীকে আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই দূর্বল। এনজিও কর্মীদের অফিসের অভিনয়ে দেখা গেছে ফারুকী টাইপের অভিনয়। বাহিরের সুটিংগুলোতে ক্যামেরাম্যানের দক্ষতার দূর্দশা যে কারই চোখে পরবে বিশেষ করে মাদকসেবীদের সাক্ষাতকার গ্রহনের জন্য চলাফেরার দৃশ্যগুলো। কখনও কখনও মনে হয়েছে ক্যামেরাম্যান হয়ত ঘুমেই পরেছিল। কয়েকটি জায়গায় তাই মনে হতে পারে-যেমন একটা ছেলেকে গণপিটুনীর সময়ে রেনুর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরে ঐ ছেলেটির নিস্ফল হাহাকার। একেবারে যেনতেনভাবে ফ্লাশ ব্যাক, যেমন টেলিভিশন কিনে ফিরে আসা, রেনু অন্ধ ভাই রোকনকে নিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটা, কল্পনায় নৌকা ও ট্রেনের দৃশ্যগুলো সবাইকেই বিরক্ত করবে নিশ্চিতভাবেই। পরিচালকই ভাল বলতে পারবেন এইসবের মর্মকথা।

আমাদের নিম্ন-মধ্যবৃত্তীয় জীবনের সচরাচর ঘটে চলা আখ্যানটাই হয়ত বলতে চেয়েছেন ছবির পলিচালক। রেনুর অনুভূতি ও তার পরিবার কেন্দ্রিক সংকট, পরিবারের টানাপোড়ন কিছুটা চিহ্নিত করতে পারলেও দৃশ্যায়নে পরিচালক শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে।




ঢাকার বাইরে মফস্বলের কোন শহরে আপনি যদি আইসক্রিম খেতে চান তাহলে হতে পারে যে আইসক্রিমটি আপনি খাচ্ছেন তা সেনাবাহিনীসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তৈরী ।

একইভাবে ধরুন রাজধানী ঢাকা কিম্বা দেশের অন্যান্য জায়গায় যেসব দালানকোঠা তৈরী হচ্ছে সেগুলোতে যেসব সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে তার প্রতি একশোটি বস্তার মধ্যে অন্তত পাঁচটি হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের তৈরী যার সাথে সশ্স্ত্রবাহিনী জড়িত।

সামরিকবাহিনী ইতোমধ্যেই যেসব নানাধরণের বাণিজ্যিক উদ্যোগ এবং প্রকল্পে জড়িত হয়ে পড়েছে তার সম্পদমূল্য অত্যন্ত রক্ষণশীল হিসাবেও তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অনেকেই বলেছেন - মনে হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক গোষ্ঠী – ইংরেজীতে যাকে বলে Conglomerate - তা হচ্ছে সেনা শিল্প গোষ্ঠী।

ফাস্টফুড থেকে সিমেন্ট তৈরী , সাধারণ হোটেল থেকে বিলাসবহুল পাঁচতারকা হোটেল , ব্যাংক , সিএনজি – পেট্রল , বৈদ্যূতিক বাতি , পাখা, জুতা এসবকিছুর ব্যবসাতেই এখন সেনাবাহিনীর নাম যুক্ত রয়েছে। আর, সেনাবাহিনীর প্রস্তাবিত প্রকল্পের তালিকা আরো অনেক দীর্ঘ। যেমন তাঁদের আকাঙ্খা রয়েছে নিজস্ব একটি বীমা কোম্পানীর। পরিকল্পনায় আছে ওষুধ তৈরীর কারখানা, বিদ্যূৎ উৎপাদন কেন্দ্র, প্যাকেজিং, চট্টগ্রামে আরেকটি পাঁচতারা হোটেল, ট্রাভেল এজেন্সি ইত্যাদি।

সেনাবাহিনীর নাম সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যেক প্রকল্পগুলোর সাথে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা ঠিক কতোটা এবং তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে জানার জন্য সেনাসদরের সাথে যোগাযোগের পর কয়েক মাস অপেক্ষা করেও সেনাবাহিনীর কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে সেনাবাহিনী সম্পর্কিত বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে সেনা কল্যাণ সংস্থা ।সংস্থাটির নিজস্ব প্রকাশনায় বলা হচ্ছে :

‘‘অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে নানারকম সেবামূলক সহায়তা দেবার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ইউনিট বা প্রকল্পের পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান আমলে এধরণের একটি প্রতিষ্ঠান ছিলো যার নাম ছিলো ফৌজি ফাউন্ডেশন এবং স্বাধীনতার পর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সহায়-সম্পদ নিয়ে বাহাত্তর সালে যাত্রা শুরু করে সেনা কল্যাণ সংস্থা। ‘‘

সেনা কল্যাণ সংস্থার সচল প্রতিষ্ঠানগুলো
মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরী , ডায়মন্ড ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ , ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলস , চিটাগাং ফ্লাওয়ার মিলস , সেনা কল্যাণ ইলেক্ট্রিক ইন্ডাষ্ট্রিজ , এনসেল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড , স্যাভয় আইসক্রিম , চকোলেট এন্ড ক্যান্ডি ফ্যাক্টরী , ইষ্টার্ণ হোসিয়ারী মিলস , এস কে ফেব্রিক্স, স্যাভয় ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরী , সেনা গার্মেন্টস , ফ্যাক্টো ইয়ামাগেন ইলেক্ট্রনিক্স , সৈনিক ল্যাম্পস ডিষ্ট্রিবিউশন সেন্টার , আমিন মহিউদ্দিন ফাউন্ডেশন , এস কে এস কমার্শিয়াল স্পেস , সেনা কল্যাণ কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স , অনন্যা শপিং কমপ্লেক্স , সেনা ট্রাভেলস লিমিটেড , এস কে এস ট্রেডিং হাউস , এস কে এস ভবন – খূলনা , নিউ হোটেল টাইগার গার্ডেন , রিয়েল এস্টেট ডিভিশন – চট্টগ্রাম এবং এস কে টেক্সটাইল
ডঃ আয়েশা সিদ্দিকা
Get this widget | Track details | eSnips Social DNA


‘ মিলিটারি ইনকর্পোরেটেড : ইনসাইড পাকিস্তান‘স মিলিটারি ইকোনমি‘ গ্রন্থের জন্য সুখ্যাতি পেয়েছেন পাকিস্তানের গবেষক ডঃ আয়েশা সিদ্দিকা। তাঁর বর্নণায় উপমহাদেশে সেনাবাহিনীর বাণিজ্যে জড়িত হবার ইতিহাসের সূচনা পঞ্চাশের দশকে। যুদ্ধফেরৎ সৈনিকদের জন্য গঠিত যে তহবিল ব্রিটিশ সরকারের কাছে ছিলো তাতে পাকিস্তানের অংশটি পাকিস্তান সরকারের কাছে হস্তান্তর করার পর পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী ভারত সরকারের মতো যুদ্ধফেরৎ সৈনিকদের মধ্যে তা বিতরণ না করে তা দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠা করে।

সেনা কল্যাণ সংস্থার সচল প্রতিষ্ঠানগুলো
মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরী , ডায়মন্ড ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ , ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলস , চিটাগাং ফ্লাওয়ার মিলস , সেনা কল্যাণ ইলেক্ট্রিক ইন্ডাষ্ট্রিজ , এনসেল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড , স্যাভয় আইসক্রিম , চকোলেট এন্ড ক্যান্ডি ফ্যাক্টরী , ইষ্টার্ণ হোসিয়ারী মিলস , এস কে ফেব্রিক্স, স্যাভয় ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরী , সেনা গার্মেন্টস , ফ্যাক্টো ইয়ামাগেন ইলেক্ট্রনিক্স , সৈনিক ল্যাম্পস ডিষ্ট্রিবিউশন সেন্টার , আমিন মহিউদ্দিন ফাউন্ডেশন , এস কে এস কমার্শিয়াল স্পেস , সেনা কল্যাণ কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স , অনন্যা শপিং কমপ্লেক্স , সেনা ট্রাভেলস লিমিটেড , এস কে এস ট্রেডিং হাউস , এস কে এস ভবন – খূলনা , নিউ হোটেল টাইগার গার্ডেন , রিয়েল এস্টেট ডিভিশন – চট্টগ্রাম এবং এস কে টেক্সটাইল।
ড: আয়েশা সিদ্দিকার মতে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা হলো সেই পঞ্চাশের দশকেই প্রথমত, পাকিস্তানের সামরিকবাহিনীর একটা আলাদা এবং জোরালো রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিলো ; আর দ্বিতীয়ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একটা ভিন্নধরণের বাহিনী হতে চেয়েছিলো যারা শুধুমাত্র দেশের জন্য যুদ্ধ করার কাজেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে রাজী ছিলো না বরং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও একটা ভূমিকার কথা ভাবছিলো। পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে, ১৯৫৩-৫৪ তে এভাবেই ফৌজি ফাউন্ডেশন গঠিত হয়।

ফৌজি ফাউন্ডেশন থেকে সেনাকল্যাণ সংস্থা :

তবে, পাকিম্তানের পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে যে বৈষম্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও পৃথক দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ সেই বৈষম্য থেকে সেনাবাহিনীও বাদ যায়নি। ফলে, ফৌজি ফাউন্ডেশনের বেশীরভাগ সম্পদই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানে। বাংলাদেশে উত্তরাধিকার হিসাবে যা পাওয়া যায় তার পরিমাণ ছিলো সামান্য।

যতোদূর জানা যায় - ১৯৭২ এ যখন বাংলাদেশ সেনাকল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তার মূলধন ছিলো আড়াই কোটি টাকার মতো। তবে, মাত্র চারবছরের মধ্যেই ঐ সংস্থার নীট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় প্রায় একশো কোটি টাকা।

সেনাকল্যাণ সংস্থার প্রকাশিত প্রচারপত্রে দেখা যায় যে গত আটত্রিশ বছরে ধারাবাহিকভাবে এর পরিধি বিস্তৃত হয়েছে। সংস্থাটির অধীনে এখন রিয়েল এষ্টেট এবং শিল্পের সেবামুখী চারটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারও রয়েছে।

এর বাইরে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কার্য্যত লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ইতোমধ্যে বন্ধও হয়ে গেছে – যেমন ফৌজি চটকল এবং ফৌজি রাইস মিলস।

তবে, সেনাকল্যাণ সংস্থার বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের আকার বা আয়তনের তুলনায় বহুগুণ বেশী বাণিজ্য করছে সেনাবাহিনীর আরেকটি কল্যাণমূলক সংস্থা – আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট।

আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের ষোলটি প্রতিষ্ঠান
আর্মি শপিং কমপ্লেক্স , রেডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল , ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটিড , সেনা প্যাকেজিং লিমিটেড , সেনা হোটেল ডেভলেপমেন্ট লিমিটেড , ট্রাষ্ট ফিলিং এন্ড সিএনজি ষ্টেশন , সেনা ফিলিং ষ্টেশন- চট্টগ্রাম , ভাটিয়ারী গলফ এন্ড কান্ট্রি ক্লাব , কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব , সাভার গলফ ক্লাব , ওয়াটার গার্ডেন হোটেল লিমিটেড - চট্টগ্রাম , ট্রাষ্ট অডিটোরিয়াম এবং ক্যাপ্টেনস ওর্য়াল্ড৻
১৯৯৮ সালে এই ট্রাষ্ট কোম্পানী আইনে রেজিষ্ট্রি করা হয়। এই ট্রাষ্টের বিনিয়োগও যেমন বিপুল , তেমনি তার বাণিজ্যিক আকাঙ্খাও বলা চলে অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী।

সরাসরি বাণিজ্যে সশস্ত্রবাহিনী :

আর, তৃতীয়ত সশস্ত্রবাহিনী সরাসরি যুক্ত হয়েছে বাণিজ্যে এমন দৃষ্টান্ত অন্তত দুটো বাহিনীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে৻ এই দুটি বাহিনী হলো সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী।

সরকারী নথিপত্রে দেখা যায় উভয়ক্ষেত্রেই এই দুই বাহিনীর আগ্রহের কারণে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতের কয়েকটি লোকসানী প্রতিষ্ঠানকে তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনী বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী লিমিটেডের স্থাপনার মধ্যেই প্রতিষ্ঠা রেছে আরো তিনটি নতুন বাণিজ্যিক ইউনিট। এর একটি হলো বিএমটিএফ সিএনজি কনভার্সন লিমিটেড এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিএমটিএফ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আর তৃতীয়টি হলো হংকংয়ে রেজিষ্ট্রিকৃত প্রতিষ্ঠান ট্রেড মিউচূয়াল হংকংয়ের সাথে যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ফুটওয়্যার এন্ড লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড।

আর নৌবাহিনীর পরিচালনায় রয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড এবং ডকইয়ার্ড অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড।

কল্যাণ ট্রাষ্টের বাইরে প্রতিষ্ঠান হিসাবে সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর এভাবে সরাসরি বাণিজ্যে যুক্ত হবার ইতিহাস হচ্ছে খুবই সাম্প্রতিক – মাত্র বছর দশেকের।

আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু :

সেনা কল্যাণ সংস্থার বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের প্রসার অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও আটানব্বুই সালের জুন মাসে তৎকালীন সেনাপ্রধান মরহুম লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের সময় প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট।

অবশ্য বাংলাদেশ আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের সংঘ স্মারকে যেসব লক্ষ্য বর্ণিত আছে তার প্রথমটিতে বলা হয়েছে :

‘‘সাবেক সেনাসদস্য এবং তাদের সন্তান ও পোষ্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও তার বিকাশের ব্যবস্থা করা।‘‘

আর দ্বিতীয় লক্ষ্যটিতে বলা হয়েছে সেনাবাহিনীর কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত ও শহীদ পরিবারের কল্যাণের কথা।

আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের এই সংঘ স্মারক থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্খী বাণিজ্যিক বাসনা নিয়েই এই ট্রাষ্ট প্রতিণ্ঠিত হয়েছে।

পুঁজিবাদী সমাজে পুঁজির যে মৌলিক চরিত্র – সেনাবাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ট্রাষ্ট বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও তার কোন ব্যাতিক্রম ঘটেনি। ছোট ব্যবসা যেমন মাঝারী ব্যাবসায় উন্নীত হতে চায় – মাঝারী ব্যবসা যেমন বড় ব্যবসায় রুপান্তরিত হতে চায় – তেমনই উচ্চাকাঙ্খী বাণিজ্যক বাসনা সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের মধ্যে দেখা গেছে।

আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের ষোলটি প্রতিষ্ঠান
আর্মি শপিং কমপ্লেক্স , রেডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল , ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটিড , সেনা প্যাকেজিং লিমিটেড , সেনা হোটেল ডেভলেপমেন্ট লিমিটেড , ট্রাষ্ট ফিলিং এন্ড সিএনজি ষ্টেশন , সেনা ফিলিং ষ্টেশন- চট্টগ্রাম , ভাটিয়ারী গলফ এন্ড কান্ট্রি ক্লাব , কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব , সাভার গলফ ক্লাব , ওয়াটার গার্ডেন হোটেল লিমিটেড - চট্টগ্রাম , ট্রাষ্ট অডিটোরিয়াম এবং ক্যাপ্টেনস ওর্য়াল্ড

ৠাডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল : আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের প্রকল্প

আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের সংঘস্মারকে আনুষঙ্গিকভাবে যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো :

ঢাকায় আবাসিক হোটেল এবং বিপণী কেন্দ্র , বাণিজ্যিক ব্যাংক, বীমা কোম্পানী, জঙ্গল বুট ফ্যাক্টরী, চট্টগ্রামে একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, কাদিরাবাদে একটি চিনি কল, যশোরে ফ্লাওয়ার মিলস, ফাউন্ড্রি এবং পেট্রল পাম্প, গলফ ক্লাব, বিভিন্নজায়গায় বিপণী কেন্দ্র, কার সার্ভিসিং এবং ওয়াশিং সেন্টার, রেন্ট এ কার সার্ভিস, প্যাকিং এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস, নারায়ণগঞ্জে ফ্যাব্রিক ডায়িং এন্ড স্ক্রিনপ্রিন্টিং ইউনিট, নারায়ণগঞ্জে হোশিয়ারী মিলস, সব সেনানিবাসে ব্রাস এন্ড মেটাল ইন্ডাষ্ট্রি, কুমিল্লায় বিদ্যূৎ প্রকল্প, রংপুরে ওষুধ শিল্প এবং ক্লিংকার প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকল্প, বগুড়ায় সিমেন্ট প্রকল্প, সিলেটে রেস্তোরা এবং পর্যটন ও ট্রাভেল এজেন্সি, ঢাকায় হাসপাতাল , সব সেনানিবাসে মৎস্যচাষপ্রকল্প এবং পোল্ট্রি খামার।

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে - সশস্ত্রবাহিনীর নানাধরণের বাণিজ্যিক উদ্যোগ গ্রহণের পিছনে পাকিস্তান যে শুধু একটি মডেল হিসাবে বিবেচিত হয়েছে তাই নয় – বরং অন্তত একটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে৻ ফৌজি বাণিজ্যের দ্বিতীয় পর্বে থাকবে সেপ্রসঙ্গ ।

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা। লেখাটি বিবিসি বাংলা বিভাগের, আমি শুধুমাত্র নিজের হাতের কাছে রাখার জন্যই ব্লগে তুলে রাখালাম।